EEE এবং বর্তমান চাকুরী বাজার


বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম। প্রথমেই সবাইকে জানাই শুভেচ্ছা। আশা করি সবাই ভালো আছ। আমি আমার এই পোস্টে EEE এবং Job Market নিয়ে আমার অভিজ্ঞতা তোমাদের সাথে শেয়ার করবো।

ইলেকট্রিক্যাল এন্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং (EEE)- শব্দ গুলো যতটা উচ্চারণে কষ্ট এই সাবজেক্ট এ পড়াশুনা করাও তেমনি কষ্ট। কষ্টকর হলেও সাবজেক্টটা অনেক মজার, একবার শুধু মজা লাগাতে পারলেই চলবে। আর Exam আসলেতো মজা আরও কয়েকগুণ বেড়ে যায়। নিজেকে তখন বাশবাগানের মাথায় চাঁদের মতো মনে হয়। এযেনো ঠিক শেষ রাতের চাঁদ :P আসলে বাঁশ আর ইঞ্জিনিয়ারিং এর রয়েছে গভীর প্রেমের সম্পর্ক। এখানে পড়তে গেলে বাঁশ আজ হোক কাল হোক খেতেই হবে। অনেককে দেখেছি প্রথম থেকেই তাদের কপাল অনেক ভালো, বাঁশ খায়না, একটা সময় পার হলেই এমনই খাওয়া খায় এক বাঁশে গৌতম বুদ্ধ বনে যায় :P আমার মনে হয় পাণ্ডার পর পৃথিবীর মধ্যে আমরাই প্রথম প্রাণী যারা এত বাঁশ খাই। অনেকের তো বাঁশ খেতে খেতে ভারতীয় নায়িকা আমিশা পাতেল (আমাশয়, পাতলা টু...ট :P) এর সাথে প্রেম হয়ে যায় :P, Exam শেষ হয়ে গেলে আমরা আবার সুস্থও হয়ে যাই, আমাদের রিকভারি রেইট খুবই উন্নত মানের।


এবার একটু হালকা ত্যানা প্যাঁচাই :P আধুনিক সভ্যতার বা বিজ্ঞানের এই উৎকর্ষতার মূল চাবিকাঠি এই বিদ্যুৎ। একবার শুধু চিন্তা করেই দেখোনা কোথায় এর ব্যাবহার নেই, শুধু তাইনা এটি ছাড়া চলেইনা আমাদের। পৃথিবীর এই বিস্ময়কর উন্নয়ন কেবলই এই বিদ্যুৎশক্তির কল্যাণেই সম্ভব হয়েছে, আর আমাদের পরাশুনাও সেই বিদ্যুৎ বা তড়িৎ প্রকৌশল নিয়ে।

তড়িৎ প্রকৌশল, প্রকৌশলবিদ্যার অন্যান্য যেকোনো বিষয়ের চেয়ে অনেক বেশি Advanced, শুধু তাইনা এর কর্মপরিধিও অনেক বেশি। যে যাই করুক না কেন এর সাহায্য নিতেই হয়। এবার এর কর্মপরিধি নিয়ে একটু বলি। এর কর্মপরিধি তথা সাবজেক্ট এর Topic এতই বেশি যে বাধ্য হয়েই আলাদা আলাদা নতুন নতুন ডিপার্টমেন্ট খুলতে হয়েছে। Computer Engineering, Telecommunication, IT, Automation, Smart Systems etc আরও অনেক কিছুই এর অন্তর্গত। এই বিষয়ে পড়ার সবচে মজার জিনিস হচ্ছে অনেকগুলা অপশন থাকে। একটা না একটা ভালো লাগবেই। আর সব টপিকেই কিছুনা কিছু জানা থাকেতো তাই জব এ ঢোকার পর যদি ভালো না লাগে অন্য ফিল্ডেও ঢোকা যায়। এখন কে কোন ফিল্ডে ঢুকবে সেটা শুরুতেই ঠিক করে ফেলা ভালো, না করলেও ক্ষতি নেই সেকেন্ড ইয়ার এর আগে ঠিক করলেই চলবে। তবে এই ব্যাপারে যারা জব ফিল্ডে আছে তাদের কাছে পরামর্শ নেওয়া যেতে পারে। আর যারা উচ্চশিক্ষা অর্জনে দেশের বাইরে যেতে চায় তাদের উচিত টিচারদের সাথে আলাপ করে নেওয়া যে কোন টপিকে আজকাল রিসার্চ হচ্ছে বা স্কোপ কোনটা তে বেশি।

ত্যানা প্যাঁচানো শেষ এখন আসি জব মার্কেট এর দিকে।
মার্কেট এ ঢোকার আগে একটা জিনিস পরিষ্কার করে বলে দেই যার মামা, চাচা, বড়ভাই মানে ভালো লিঙ্ক আছে বাংলাদেশে জব এর জন্য তার টেনশন না করলেও চলবে। তাদের জন্য আমার বার্তা হচ্ছে ফাইনাল ইয়ার Exam শেষ করে “ওপ্পান গাংনাম স্টাইলে নাচতে থাকো আর অল্প একটু ওয়েট করো”। তো চলো সবাই আমরা এখন থেকে মামা, চাচা, বড়ভাই খোঁজা শুরু করে দেই :)

নিচের ইতিহাস শুধুমাত্র তাদের জন্যই যাদের আমার মতো ইগো প্রবলেম আছে বা ভালো লিঙ্ক নাই/নিজের যোগ্যতায় জব পেতে চাও। প্রথমেই বলছি এক্ষেত্রে একটু ধৈর্য ধরতে হবে। ভয়ের কোনো কারন নেই। একটা কথা আছে, “দেরিতে জব হলে ভালো জায়গাতে হয়”। আমার কথাই বলি আমি অনেকদিন যাবত জব খুঁজেছি (যদিও আমার মেইন টার্গেট উচ্চশিক্ষার্থে বৈদেশগমন) নিজের চেষ্টায়, কারো কাছে যাইনি নিজের কাছেই খারাপ লাগে এসব রিকুয়েস্ট করতে। নিজের কাছে নিজেই ছোট হয়ে যাই। এই পৃথিবীতে সবচে বড় সমস্যা হচ্ছে নিজের কাছে নিজে ছোট হয়ে যাওয়াটা। Self respect matters. সেই কারনেই কাউকে বলা হয়নি। এই সময়ে ফামিলি সাপোর্ট এর খুবই দরকার, যেটা আমি পেয়েছি, পাই, পাবোও ইনশাআল্লাহ। আমি এখন একটা মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে জব করছি। প্রোজেক্ট বেসিস জব তো তাই আয়ের সুযোগটাও বেশিই। আল্লাহর উপর ভরসা কখনই হারাইনি, ধৈর্য ধরে এগিয়েছি আল্লাহ ধৈর্যের ফল নিজ হাতে দিয়েছেন। আলহামদুলিল্লাহ। এখন শুধু ভালো একটা স্কলারশিপ/ ফান্ডিং পেলেই খুশি।

যাইহোক আসলে লিঙ্ক না থাকলে অনেকক্ষেত্রে ইনটারভিউতেও ডাকেনা। সেজন্যই ধৈর্য ধরতে বলছি। ডাক পেতে একটু দেরি হবে আর কি। Mentally prepare থাকাটা জরুরি। সেক্ষেত্রে নিজেকে প্রতিনিয়ত প্রস্তুত করে নিতে হবে। ইনটারভিউটা খুব ভালো দিতে হবে, এক্ষেত্রে বড়ভাই যারা আছেন তাদের কাছ থেকে আইডিয়া নিতে পারো। সাথে সাথে CCNA, CCNP, PLC, Microcontroller ইত্যাদি কোর্স করে নেওয়া ভালো, এতে করে নিজেকে অন্যদের তুলনায় এগিয়ে রাখলে আরকি। তাছাড়া এসব কাজ জানাদের জব দেখেছি আগেই হয়ে যায়। এছাড়া IELTS/TOEFL, GRE এসবও পাশাপাশি করে নেওয়া ভালো। বাইরে যাওয়ার ধান্দাটা দেশে জব খোঁজার চেয়ে অনেক ভালো। আর এইসময়টাকে Enjoy করা উচিত কারন এতো ফ্রী আর কখনও থাকার সুযোগ মিলবেনা।

আরেকটা জিনিস বলে রাখা ভালো যে শুধুমাত্র bdjobs.com এ অনলাইনে অ্যাপ্লাই করলেই হবেনা পাশাপাশি হার্ডকপিও পৌছাতে হবে। এক্ষেত্রে অনেকগুলো CV খামে খামে ভরে এলাকা ভিত্তিক সফর করা যেতে পারে। যেমন ১ দিন বের হবা গুলশান, বনানী, মহাখালী এসব এলাকার অফিস গুলোতে যেখানে যেখানে bdjobs.com এ সার্কুলার হয়েছে সেসব জায়গায় CV পৌছাতে। আর পাশাপাশি ঐসব এলাকায় বসবাসকারী ফ্রেন্ডদেরকে আগে জানিয়ে রাখো যে তুমি ওর এলাকায় গেজাইতে আসতেসো। তাতে করে দুপুরের খাবারটা ওর বাসায় সেরে আসতে পারবে :)

বর্তমানে বিশ্বজুড়ে চলছে অর্থনৈতিক মন্দা তার প্রভাব আমাদের দেশেও পরেছে। ফলে কোম্পানি/ইন্ডাস্ট্রিগুলো তাদের সেই আর্থিক ক্ষতি পুষিয়ে নেয়ার জন্য অনেক এমপ্লয়ি টারমিনেট করছে। আমাদের দেশেও এর প্রভাবটা পড়েছে। অর্থনৈতিক মন্দার প্রভাবটা যতটুকুনা প্রকট তারচে অনেক বেশি ফায়দা লুটছে আমাদের দেশের ইনভেসটররা। নতুন লোক কম নিচ্ছে যাদেরকে নেওয়া হচ্ছে তাদের কে খুব কম বেতন অফার করা হচ্ছে। এতো কম বেতনে কখনই তারা একজন ইঞ্জিনিয়ার রাখতে পারেনি। ইনটারভিউ বোর্ড থেকে যখন কেউ কম বেতনের জব নিয়ে বের হয়, তখন আমি নিজেই HR এর লোকদের হাসি শুনতে পেয়েছি। তাদের এই হাসির অর্থ হচ্ছে “ব্যাটা ভোঁদাই এতো কম বেতনে রাজী হয়ে গেলি” শুধু তাইনা তারা আবার তাদের হাইয়ার অথরিটির কাছে গর্ব করে বলে যে “দেখুন স্যার কতো অল্প সেলারিতে ইঞ্জিনিয়ার রেখে দিসি” এইসব বলে তারা নিজেদের অবস্থান পাকা করে। যেহেতু বাজার খারাপ সেজন্য যারা ঢুকছে তারাও উপায়ন্তর না দেখে অনেকটা বাধ্য হয়েই ঢুকছে। গত ২-৩ বছর আগেও একজন ইঞ্জিনিয়ার যে বেতনে ঢুকত এখনকার ইঞ্জিনিয়াররা পায় তার ৩ ভাগের ১ ভাগ অনেকক্ষেত্রে ৪ ভাগের ১ ভাগ। চিন্তা করে দেখো পরিস্থিতি কতটুকু খারাপ। আমার এক পরিচিত বড়ভাই এর কাছে শুনলাম যে গ্রামীনফোন তাদের নেটওয়ার্ক এর কাজ শেষ হয়ে যাওয়াতে কয়েক শত শুধু ইঞ্জিনিয়ারই টারমিনেট করেছে আর উনিও তাদের একজন। উনার জন্য শাপেবর হয়েছে অবশ্য, উনি এখন নরওয়ে তে ভালো একটা কোম্পানিতে জব করেন। সেলারি ৩ লক্ষ টাকারও বেশি।

এখন আসি আমাদের তড়িৎ প্রকৌশলীদের জন্য জব সেক্টর গুলোর দিকে। আমাদের দেশ টেকনোলজিক্যালি অতটা উন্নত নয় কিন্তু উন্নতির ছোঁওয়াটা খুব ভালভাবেই লাগা শুরু হয়ে গিয়েছে। কিছুদিন আগেও যেসব কাজ হতো তাতে আমাদের ডিপ্লোমা ইঞ্জিয়াররাই যথেষ্ট ছিল। তবে এখন অনেক বড় বড় কোম্পানি দেশে কাজ করছে আর আমাদের সুযোগটাও দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। ইলেকট্রনিক্স এর ফিল্ড খুব বেশি ভালোনা। টেলিকমের ফিল্ড Saturated অবস্থায় আছে, তারপরও আমি বলব যে ভালই। যদিও দেশে অনেক পাওয়ার প্ল্যান্ট হচ্ছে এরপরও সুযোগ কম। তবে এই মুহূর্তে IT, Networking, Software, Automation এসব ফিল্ডে প্রচুর জব রয়েছে।

অবশেষে বলতে চাই হতাশ হবার কোনো কারন নেই, একটা না একটা হয়েই যাবে ইনশাআল্লাহ। শুধু দরকার একটু ধৈর্য আর প্রস্তুতি। প্রথমদিকে একটু কষ্ট করতেই হবে কিন্তু ২-৩ টা বছর পার হলেই আর অভিজ্ঞতা নামক জিনিসটা অর্জন করে ফেললেই কেল্লাফতে। কে পায় আর তোমাকে, তখন তুমিনা জব-ই তোমাকে খুজবে। তখন সব তুলেমূলে উশুল করে নিবা।

অনেক কথা বলে ফেলছি। যাইহোক এতক্ষণ যারা আমার জ্ঞানহীনপকপক সহ্য করেছেন তাদের সবাইকে জানাই আন্তরিক ধন্যবাদ এবং নতুন বছরের শুভেচ্ছা। ফি-আমানিল্লাহ।


লিখেছেন - Jobair Ibna Abdul Alim

Industry Survey Engineer

Bureau Veritas (Bangladesh) Private Ltd.

2 comments:

  1. আমার সম্পুর্ন লিখা পড়ে আমি আনন্দি। কারণ আমিও EEE নিয়ে পড়িতেছি। আপনার লিখার সাথে বাস্তবতার অনেক মিল রয়ে। তাই আপনার কাছে পরামর্শ চাই, একটা নিম্ন বেতনে জবের পাশাপাশি পড়াশোনা করতেছি আর ভাবতেছি পোশাক শিল্পে জব করবে তো এতো পড়াশোনার দরকার কি??? এসএসসি পাশ করে আসলে তো আজ অনেক ভালো অবস্থানেে যাইতে পারতাম। এই হতাশা থেকে পড়াশোনায় একটা ভিতি সৃষ্টিহয়েছে। ফলে সরকারি জবের জন্য পড়াশোনা করতে ভয় লাগে। এখনআমার কি করা উচিত উত্তম পরামর্শদানে বাধিত করিবেন ।

    ReplyDelete
  2. ইইই থেকে আইটি কোম্পানি লাইক গুগল,এপল,আমাজন,মাইক্রোসফট এগুলোতে জবের সুবিধা কেমন?
    অথবা দেশে যে আইটি কোম্পানিগুলো আছে, ওরাও কি ইইই-র পোলাপাইন নিয়ে থাকে?

    ReplyDelete